ঘুর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সাতক্ষীরা তালা উপজেলা নিম্নাঞ্চল আবারও তলিয়ে গেছে। গত বুধবার থেকে ঘূর্ণিঝড় দানা’র প্রভাবে কার্তিকের আকাশ থেকে অঝর ধারায় ঝরতে থাকে শ্রাবণীধারা। এতে আবারও তলিয়ে গেছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল। তালা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার। দফায় দফায় বর্ষণে মৎস্যঘের, আউশ ধান ক্ষেত, সবজির ক্ষেতে সহ সকল প্রকার কৃষি ফসল নষ্ট হয়েছে। সরবরাহ কম থাকায় সবজি ও চালের বাজার অস্থির। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি নিয়ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। আউশ ধান হয়নি, আবারও বৃষ্টি হওয়ায় এই মৌসুমে বোরোধান না হওয়ার আশংকায় কৃষক। এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে কাঁচা ও আধাপাঁকা রাস্তা এমনকি পিচের রাস্তাও চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তেঁতুলিয়া, খেশরা ও খলিশখালী ইউনিয়ন। বাদ পড়েনি অন্যান্য ইউনিয়নও। মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে ঘের মালিকদের ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। গবাদি পশু হাঁসমুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষ। কয়েকদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমা শুরু হয়। তবে ঘুর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হলে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নসহ উপজেলার ২৩০টি গ্রামের মধ্যে অধিকাংশ এলাকা আবারও প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা তেঁতুলিয়া, খেশরা, খলিশখালী, নগরঘাটা ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সকল ইউনিয়নে ধান ও সবজি পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের জীবন খুব সংকটময় পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছে। সাধারণ মানুষের আশঙ্কা অবধারিত খাদ্য সংকটে পড়বে আগামীর তালা উপজেলা। দিনমজুর কৃষকরা কাজ না পেয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এদিকে ধারাবাহিক বৃষ্টিতে বেসরকারী হিসাব অনুযায়ী উপজেলার প্রায় ১ থেকে ২ হাজার মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৫০ কোটি টাকারও বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ঘের মালিকরা জানিয়েছেন। এমনকি উপজেলা ৩-৪ ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক পোল্ট্রি খামার পানিতে তলিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খামারী মতিয়ার রহমান, শিরিনা বেগমসহ একাধিক খামারী। অপরদিকে মসজিদ, মন্দির গীর্জাসহ সকল ধরণের একাধিক ধর্মীয় উপাসনালয়ে পানি উঠেছে। ব্যাহত হচ্ছে ইউনিয়নের শিক্ষা কার্যক্রম। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে যেতে না পারায় শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। চরম বিপাকে পড়েছেন এই জনপদের মানুষ। এলাকাজুড়ে পানি থাকায় স্যানেটারি ব্যবস্থায় পড়েছে বিরুপ প্রভাব। এতেকরে সুপেয় পানির অভাবের পাশাপাশি পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, চর্ম রোগ সহ বিভিন্ন রোগের প্রাদূর্ভাব বেড়েছে। সরেজমিনে ঘুরে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে দেখা গেছে, এই ইউনিয়নটি ১৭টি গ্রামের সবকটিই পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কৃষকদের ফসল পানির নিচে থাকায় পচন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিরাশুনী, লাউতাড়া, পাঁচরোখি, সুভাশিনী, মদনপুর, সুমজদিপুর, দেওয়ানীপাড়া গ্রাম। এসকল এলাকার ধানও সবজি পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কাজের সুযোগ না থাকায় বেশী সংকটে পড়েছে দিনমজুর। ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মনু, মতিয়ার রহমান, শুকদেবপুর গ্রামের মোশারাফ হোসেন সহ অনেকেই জানান, তারা সহ এই এলাকার মানুষ প্রায় দুই মাস পানিবন্ধি। তাদের বাথরুম ব্যবহারের অনুপোযোগী। রান্না ঘরে পানি উঠায় রান্নাবান্না করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। চারিদিকে পানি থাকায় বেড়েছে বিষধর সাপের উৎপাত। এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ও গোয়ালঘরে সাপ উঠছে। সাপের উপদ্রপ থেকে রক্ষা পেতে কার্বলিক এসিড কেনার জন্য দোকানে দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন তারা। ইতোমধ্য কয়েকটি পদ্মগোখরা সাপ পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য সাধারণত খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার ভদ্রা নদী দিয়ে পানি উঠানামা করে। বর্তমানে ডুমুরিয়ার চুকনগরের নরনিয়া অংশে ভদ্রা নদীর তলদেশ উঁচু ও ¯øুইস গেট পলিমাটিতে উঁচু হয়ে পানি নিষ্কাশন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। কেশবপুর উপজেলার পানি নরনিয়া অঞ্চল দিয়ে ভাটি অঞ্চলে প্রবেশ করছে। ফলে পানি বৃদ্ধি পেয়ে রাস্তা, বাড়ি-ঘর, মৎস্য ঘের প্লাবিত হচ্ছে। তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেল জানান, কয়েকদিনের অতি বর্ষণ ও সাতক্ষীরা সদরের বেতনা নদীর ভেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল তলিয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় ডানার কারণে প্রবল বর্ষণে দূর্গত এলাকায় পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলাবাসির দূর্দশা লাঘবে স্থানীয় জনগনকে সাথে নিয়ে কপোতাক্ষ, শালতা ও বেতনা নদীর সাথে সকল সংযোগা খালের নেটপাটা অপসারণ করে উন্নুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নরনিয়া ¯øুইস গেট এলাকায় পলি মাটি অপসারণের জন্য ৩/৪টি স্কেভেটর দিয়ে কাজ চলমান আছে। তবে এর স্থায়ী সমাধানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রকল্প গ্রহণ করে নদী ও সকল সংযোগ খাল খনন করতে হবে। ## |
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।