তালায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জাতপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন বিশ^াস গংদের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক টাকার গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। টানা ২/৩ ধরে উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সুকদেবপুর গ্রামে উক্ত ঘটনা ঘটে। তালা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কর্তন বন্ধ করে দিলেও পুলিশ চলে যাবার সাথে সাথে আবারও গাছগুলো কেটে বিক্রি করা অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগিদের পক্ষে লক্ষণপুর গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিন শেখের পুত্র সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান শেখ জানান, তালা থানাধীন সুকদেবপুর মৌজার এস এ ৩২ খতিয়ানে ২০৩, ২০৪ ও ২০৫ দাগে ১.১৯ একরের আট আনা অংশে ৬০ শতকের মালিক মাদার। মাদারের ওয়ারিশ মোঃ তয়েজ উদ্দিন সরদার, মোঃ ইলাজ উদ্দিন সরদার, নয়েজ উদ্দিন সরদার, খোদা বক্স সরদার ও ফুল মিয়া সরদারদের নিকট থেকে গত ৮/৮/২০০০ ইং তারিখে ৯৫৫৩ নং রেজিষ্ট্রি কোবলা দলিল মুলে ৭৫ শতক জমি খরিদ করা হয়। উক্ত জমি আব্দুর রহমান শেখসহ খরিদ করেন আবুবক্কর মোড়ল, সাহাবুদ্দিন বিশ্বাস, সৈয়দ মিজানুর রহমান ও মোঃ লিয়াকত আলী সরদার। পুনরায় ঐ একই খতিয়ান ও দাগ হতে বাকী আট আনার মধ্যে ফয়েজ উদ্দিনের বোন দাসী বিবির নিকট হতে ২৭/৯/২০০০ তারিখে ৫৭১৮ নং রেজিষ্ট্রি কোবলা দলিল মুলে ১০ এবং আল্লাদি বিবির নিকট থেকে গত ইং ২৫/৯/২০০০ ইং তারিখে ৫৬৮৬ নং রেজিষ্ট্রি কোবলা দলিল মুলে ৪৫ শতক খরিদ করেন আবুবক্কর দিংসহ লুৎফর রহমান ও আইউব আলী। মোট ১.৩০ একরের মধ্যে প্রকৃত মালিক ১.১৫ একর সম্পত্তি ক্রয় সুত্রে মালিকানা অর্জন করত শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখলীকার আসছি।
তিনি বলেন, ১৯৫৪ সাল হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইসলামকাটি সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে সকল দলিলপত্র আগুন লেগে পুড়ে যায়। এই সুযোগে জাতপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন বিশ^াস, তার স্ত্রী হোসনেয়ারা বিশ^াস, সহোদর শরিফুল ইসলাম বিশ^াস ও ফারুক বিশ^াস ঐ সময়ের দলিলের রেফারেন্স দিয়ে পররবর্তীতে দলিল করে নিয়েছে। যে দলিল তারা কখনও দেখাতে পারিনি। এ ছাড়া আমজাদ হোসেন যে সময়ে দলিল করে নিয়েছে সে সময়ে তিনি উত্তরণ সংস্থায় চাকুরী করতেন এবং তফশীল সম্পত্তিতে উত্তরণ সংস্থার চলমান মৎসচাষ প্রকল্প আমজাদ হোসেন দেখাশুনা করতেন। সেকারণে জমির মালিকদের সাথে চেনা জানা থাকায় এবং উক্ত জমির কাগজ পত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকায় সুযোগ বুঝে অপকৌশলে ভূয়া দলিল করে নিয়েছেন। সে কারণে উক্ত বিষয় নিয়ে উভয় পক্ষ দেওয়ানী আদালতে একাধিক মামলা করেছে। যার মামলা নং দেও: ১০০/২০১১ এবং ১১৯/২০১১। এছাড়া অভিযুক্ত কারীদ্বয় আমজাদ হোসেনকে দিতীয় পক্ষ করিয়া দখল সম্পর্কীত একটি মামলা করে অতিরিক্তি জেলা ম্যজিষ্ট্রেট আদালত, সাতক্ষীরায়। বিজ্ঞ আদালত উভয় পক্ষের শুনানী অন্তে অভিযুক্তকারীদের দখল আছে এবং দখল বজায় রাখিবার জন্য তালা থানার ওসি কে নির্দেশ প্রদান করে মামলাটি নিস্পত্তি করেন। যার মামলা নং- পিটিশন ৮৭৬/১১। একইভাবে বিভিন্ন সময়ে জমি জবর দখল করার পায়তারা করলে ১ম পক্ষ প্রতিকারের আশায় আরো একাধিক মামলা করেছেন। সর্বশেষ ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পরদিনই তফশীল জমি জবর দখল করার জন্য উক্ত ২য় পক্ষসহ অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জন অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে জোর পুর্বক মেহগনি, লম্বু খৈ ও বাবলাগাছ সহ অন্যান্য গাছ গাছালী কেটে নিয়ে যায় এবং পুকুর হতে মাছ মেরে নিয়ে যায়। সেকারণে আমরা বাদী হয়ে সাতক্ষীরা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করি যার নং- সি আর ২৬০/২৪ মামলা করি যেটি চলমান রয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি উক্ত গাছ বিক্রির পায়তারা চালায় আমজাদ বিশ^াস গং। এ ঘটনা বুঝতে পেরে ফের আদালতের শরনাপন্ন হন ভুক্তভোগিরা। এরই প্রেক্ষিতে গত ১১ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত শান্তিশৃংঙ্খলা বজায় রাখবার জন্য ১৪৫ ধারা জারী করেন। উক্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে টানা ২/৩ ধরে তারা ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকার গাছ কেটে বিক্রি করে। তালা থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রাথমিকভাবে গাছ কর্তণ বন্ধ রাখলেও পুলিশ চলে গেলে ফের গাছ কোট বিক্রি করা অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমজাদ বিশ^াস গংদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে গাছ কাটা শ্রমিকরা জানান, জাতপুর গ্রামের আমজাদ বিশ^াস ও তার স্ত্রী হোসনেয়ারা বিশ^াস উক্ত গাছ ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করেছে।
এ বিষয়ে তালা থানার এস আই মোঃ খলিলুর রহমান আদালত হতে প্রাপ্ত ১৪৫ ধারার কাগজ হাতে পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, উক্ত গাছ কর্তন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।