এইচএসসি পরীক্ষার্থী সালমা (ছদ্ম নাম)। মরণঘাতী ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসা করাতে করাতে এক সময় ক্লান্ত পরিবার। ব্যয় কুলাতে না পেরে পরিবার একসময় হাল ছেড়ে দিয়েছিল। আশা প্রায় শেষ। জীবনের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষার্থী সালমার স্বপ্নও যেন নিভে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় বিস্ময়করভাবে একজন অপরিচিত মানুষ সালমার চিকিৎসা ব্যয় বহন করার দায়িত্ব নেন। সেই পরিবারের কাছে নিজের পরিবচয় গোপন করে চিকিৎসার খবর বহন করা ব্যক্তি হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নীরবে সালমাকে লড়াইয়ের সুযোগ দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
উদারতার এই কাজটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং তারেক রহমান বছরের পর বছর ধরে যে শান্ত, অটল জনহিতকর কাজ করে চলেছেন তার একটি আভাস। এমন অনেকের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান, কিন্তু বেশিরভাগই জানতেন না তাদের উপকারকারী ব্যক্তিটি কে।
এভাবে বহু বছর ধরে তারেক রহমান অসহায় ও দরিদ্রদের জন্য নীরব অভিভাবক হয়ে আছেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং ১/১১ এর সময় অনেক নির্যাতনের মুখোমুখি হন। নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। নিজের ভাগ্যের এই পরিহাস সহ্য করেও তিনি ধারাবাহিকভাবে অভাবিদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এমনই একজন সুবিধাভোগী বিএনপির লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিধবা শাহনাজ বেগম। রব্বানীকে তার স্ত্রী ও তিন কন্যা রেখে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সদস্যরা হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শাহনাজ গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বলেন, ‘তারেক রহমান আমাদের কখনোই ‘একা’ বোধ করতে দেননি। তিনি আমার বাচ্চাদের পড়াশুনা, চিকিৎসা খরচ সবই করেছেন। এমনকি তিনি আমাদের একটি বাড়িও তৈরি করে দিয়েছেন। আমি মনে করি, আমরা তার পরিবারের অংশ এবং প্রতিদিন তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। ’
তারেক রহমানের নীরব উদারতার আরেকটি গল্প এসেছে ইমন (ছদ্ম নাম) এর কাছ থেকে। তিনি এখন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন প্রায় ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
ইমন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার এইচএসসির ফল ভালো ছিল, কিন্তু আমি কীভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তারপর দেবদূতের মতো আমার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান। ’
বছরের পর বছর ধরে এমন কাজগুলো ‘আমরা বিএনপি পরিবার’- এর ব্যানারে আরও সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মটিতে তারেক রহমান বছরের পর বছর সহায়তা দিয়ে আসছেন। যা সংগঠনের কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে দেয়।
এই প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন। তিনি ব্যাখ্যা করেন কীভাবে তারেক রহমান এসব কাজে এগিয়ে এসেছেন। ব্যাখ্যা করেন তার উদারতা কথা।
তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই অভাবীদের প্রতি তার (তারেক রহমানের) গভীর সহানুভূতি ছিল। যখন আমি তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে শুরু করি, তখন এগুলো আমার নজরে আসে। তিনি দরিদ্র ছাত্র, অসুস্থ এবং সুবিধাবঞ্চিতদের কীভাবে সাহায্য করেন তা দেখেছি। ’
২০০৩ সালের একটি গল্প শেয়ার করে রুমন বলেন, ‘একজন নারী তারেক রহমানের বনানী অফিসের বাইরে ভিক্ষা করতেন। তার কোলে শুয়ে ছিলেন একজন বয়স্ক নারী, গুরুতর অসুস্থ এবং তার মুখ থেকে রক্ত ঝরছিল। তাদের দেখে তারেক রহমান তাৎক্ষণিকভাবে রুমনকে বৃদ্ধা নারীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। তিনি সুস্থ হওয়ার পর, তাদের গ্রামে একটি ছোট মুদি দোকান প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থায়ন করেন। তাদের নতুন করে শুরু করার জন্য তিনি তাদের ৩০ হাজার টাকা দেন। ’
২০০৪ সালের কথা তারেক রহমান মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান শুরু করেন। যাদের অনেকেই জানতেন না এই অর্থ কোথা থেকে আসছে।
২০০৬ সালে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন এবং বিএনপি নেতাদের তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাচিত মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ৪৪-৪৬ জন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি বাড়ানো হয়েছিল।
এমনকি ১/১১’র রাজনৈতিক উত্থানের সময় যখন তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন, তখনো তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে, তার জনহিতকর কাজ অবিরাম অব্যাহত থাকবে।
চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার পর তারেক রহমান তার প্রচেষ্টা পুনরায় শুরু করেন। যেসব ছাত্র ও পরিবারের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের ওপর ফের দৃষ্টি দেন।
তারেক রহমানের পরোপকারের গল্প শিক্ষার বাইরেও বিস্তৃত। যেমন, ২০১৪ সালে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে নিহত বা নিখোঁজদের ৭৫০ পরিবারকে ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণের জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।
২০০৪ সালে ‘আমরা বিএনপি’ পরিবার দ্বারা সমর্থিত পরিবারের সংখ্যা ৯০০- এ উন্নীত হয়েছে। এখন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’এর ছত্রছায়ায় তারেক রহমানের জনহিতৈষী কাজ অব্যাহত রয়েছে। সংস্থাটি অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়মিত আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। দরিদ্রদের মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা, বাড়ি নির্মাণ এবং সারা বাংলাদেশে এতিমখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন করে।
ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা একজন নারী মারা যান। হৃদয়বিদারক এ ঘটনার পর তারেক রহমান তার পরিবারকে মাসিক ৫ হাজার করে আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখে।
তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানও এই দাতব্য প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নির্দেশনা ও তদারকি প্রদান করেন।
রুমন বলেন, ‘তাঁর নির্দেশে আমরা ছাত্ররা গণ-অভ্যুত্থানের সময় নিহত বা আহত শিশু ও নারীদের পরিবারে গিয়েছি এবং তাদের সহায়তা করেছি। ’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘গণআন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সদস্যদের হাতে আহত বা নিহত হওয়া ২১ শিশু ও নারীর পরিবার তারা ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন। ’
তারেক রহমানের দৃষ্টিভঙ্গির একটি উদ্ধৃতি করে রুমন বলেন, ‘আমি এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে অভাবীকে সহায়তা করার জন্য এ জাতীয় প্ল্যাটফর্ম বা ব্যক্তির প্রয়োজন হবে না। কারণ, কেউ অসহায় বা দরিদ্র থাকবে না। ’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর প্রধান উপদেষ্টা রুহুল কবির রিজভী উল্লেখ করেন, ‘তারেক রহমান ধারাবাহিকভাবে দরিদ্র ও অসহায়দের পাশাপাশি দলের সদস্যদের যারা নিহত, আহত বা কারারুদ্ধ হয়েছেন, তাদের সহায়তা দিয়ে আসছেন। ’
তারেক রহমানের নির্দেশে দলের নেতারা নিঃস্ব পরিবারের বাড়িতে গিয়ে সহায়তা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সূত্রঃdainikdinkal.net