শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাসে সমাজভিত্তিক শিশুযতœ কেন্দ্র এবং সাঁতার প্রশিক্ষণের কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে বেসরকারী সংস্থা উত্তরণ। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সহযোগিতায় উত্তরণের সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযতœ কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান (আইসিবিসি) প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় ৫০০ টি করে ১ হাজার শিশু কেন্দ্রের ১-৫ বছরের কম বয়সী ২৫ হাজার শিশুকে প্রশিক্ষিত যতœকারী ও সহকারী যতœকারীরে মাধ্যমে তারা খেলার ছলে গল্পে-গল্পে কবিতা, ছবি আঁকা ও নাট্য অভিনয় শেখে, নির্দিষ্ট সময় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা এবং মনোসামাজিক সহায়তা লাভ করে।
উত্তরণের ফোকাল পার্সন মনিরুজ্জামান জমাদ্দার জানান, সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা ও শ্যামনগর এবং বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট, শরণখোলা ও ফকিরহাট উপজেলায় পরিচালিত এসব কেন্দ্র শিশুদের কেবল দেখাশোনায় করে না বরং তাদের মানসিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক দক্ষতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাঁতার কার্যক্রম একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে প্রশিক্ষিত স্থানীয় সাঁতারুর (এলএসআই) তত্ত¡াবধানে থাকার ফলে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। শিশুদের অবাধ চলাফেরা ও নজরদারির অভাবে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলো ঘটে, তা এ ধরনের কেন্দ্রসমূহের মাধ্যমে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর বহু শিশু, বিশেষ করে ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী স্কুলগামী শিশুরা, পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। এটি এখন একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই সমস্যার টেকসই সমাধানে “উত্তরণ আইসিবিসি প্রকল্প” এবং (সিআইপিআরপি) কারিগরি সহায়তায় বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় বাস্তবায়িত ১০০ টি সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুরা প্রশিক্ষণ গ্রহন পূর্বক একটি রোল মডেল হিসেবে সর্বত্র বিবেচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় দুই জেলাতে ৭ হাজার ৫শ’ করে ১৫ হাজার শিশুকে জীবন রক্ষাকারী সাঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ হাজার ৯১৪ জন শিশু যা আগামীতে তাদের আত্মরক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস, শৃঙ্খলা, দলগত কাজ ও নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে সহায়ক হবে।
সালমা খাতুন নামের একজন অভিভাবক বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। এই প্রেক্ষাপটে সমাজভিত্তিক প্রারম্ভিক শিশুযতœ কেন্দ্র ও সাঁতার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর সমাধান হিসেবে সামনে এসেছে।
দেবহাটা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন জাহান বলেন, সাঁতার শেখা একটি মৌলিক জীবন নির্ভরগত দক্ষতা, যা কেবল দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করেই না, বরং শিশুর শারীরিক সুস্থতা ও আত্মনির্ভরতা অর্জনেও ভূমিকা রাখে। যখন শিশুরা দলগতভাবে প্রশিক্ষণে অংশ নেয়, তখন তারা একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে শেখে, বন্ধুত্ব গড়ে তোলে এবং একটি ইতিবাচক মনোভঙ্গি তৈরি করে, যা তাদের জীবন চলার পথ প্রদর্শক হয়ে ওঠে।
বাগেরহাট জেলা শিশু কর্মকর্তা মোঃ আসাদুর রহমান বলেন, সমাজভিত্তিক শিশু যতœকেন্দ্র ও জীবন রক্ষাকারী শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এই দুই উদ্যোগ যদি সম্মিলিতভাবে দেশে ব্যাপকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। সমাজভিত্তিক শিশুযতœ কেন্দ্রসমূহ শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে বলেও মনে করেন তিনি।
মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ, যতœশীল ও শিক্ষণীয় পরিবেশ নিশ্চিত করা মানে একটি সুস্থ, সচেতন ও আগামীর উন্নত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এই ধরনের উদ্যোগ কেবল সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার মাধ্যমেই নয় বরং সমগ্র সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী ও টেকসই করে গড়ে তোলা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।