আজকের শিশুরাই আগামীদিনের পরিণত মানুষ। ভবিষ্যৎ জাতির উত্তরাধিকার ও জাতির কর্ণধার। তাই আমাদের এই শিশুরাই হচ্ছে দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করে তাদের উদ্ভাবনী বা সৃজনশীলতায় উদ্বুদ্ধ করতে পারলে দেশ ও জাতির উপর তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে।
প্রতিটি শিশুই অপার কৌতূহল ও কল্পনাশক্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তার মধ্যে উদ্ভাবনী ধারণা বা সৃজনশীলতা এমন একটা দক্ষতা যার মাধ্যমে শিশু তার এই অপার কৌতূহল ও কল্পনাশক্তিকে সমন্বিত করে উপযুক্ত স্থানে ব্যবহার করে নতুন নতুন বিষয় সৃষ্টি বা আবিষ্কার করতে পারে। এ বিষয়ে যে শিশু যত দক্ষতা অর্জন করবে তার সফলতার সম্ভাবনাও তত বেশি বাড়বে।
জন্মলগ্ন থেকেই শিশু তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা প্রকাশ করে। জন্মের প্রথম ধ্বনি ক্রন্দন, যা প্রাকৃতিক নিয়মে করানো হয়। দ্বিতীয় বা পরের ক্রন্দন সে তার তৃষ্ণা, ক্ষুধা, অবস্থান বুঝাতে তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা ক্রন্দন বা কান্না করে প্রয়োজন নিবৃত্তি করে। সুতরাং তাই বলা যায় যে, শিশুর মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা বা সৃজনশীলতা জন্মের পর থেকেই পরিলক্ষিত হয়। যা পরবর্তীতে শিশুর মানসিক বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে।
শিশুর প্রথম শেখার স্থান হচ্ছে তার পরিবার। আদর্শ হচ্ছে তার মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা। পরিবার থেকেই সে প্রতিনিয়ত দেখেশুনে তা তার ব্যক্তিজীবনে অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাধারণত শিশুর বিকাশ বলতে শুধু শরীরের সুস্থতা ও বুদ্ধিকেই বুঝি এবং তার উপর গুরুত্ব দেই। কিন্তু এর পাশাপাশি শিশুর মানসিক, সামাজিক, আবেগিক ও নৈতিক বিকাশও গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চর্চা ও অনুশীলনে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়। শিশুর মধ্যে নিত্যনতুন কল্পনা ও চিন্তা-চেতনা সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারে। ফলে ছোট বেলা থেকেই শিশুর মধ্যে উদ্ভাবনী ধারণা বা সৃজনশীল গুণটি বিকশিত হয়, যা পরবর্তীতে কাজে ব্যবহৃত হয়। শিশুর মানসিক বিকাশে উদ্ভাবনী ধারণা বা সৃজনশীলতা প্রকাশের দ্বিতীয় স্থান হচ্ছে বিদ্যালয়। এক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষক শিশুর মানসিক বিকাশে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারেন। শিশুরা তার কাছ থেকেই বিকশিত হয়। তাই শিশুর বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকার বিকল্প নেই।
উদ্ভাবনী ক্ষমতা বা সৃজনশীলতা এমনিতেই তৈরি হয় না। এটি চর্চা ও অনুশীলন করতে হয়। ছোট বেলা থেকেই এটার চর্চা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে শিশুদের পাঠ্যবইয়ে আবদ্ধ না করে তাদেরকে সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করা উচিত। এর জন্য প্রয়োজনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি, পর্যাপ্ত খেলাধুলার সামগ্রী মজুত, শিশুদের ভালো কাজে উৎসাহ ও স্বীকৃতি প্রদান এবং পর্যাপ্ত ফ্রি সময়ের ব্যবস্থা রাখা। শুধু বইনির্ভর পাঠ ও সময়ের আবর্তনে বেঁধে রাখলে তাদের আনন্দ হারিয়ে যায়। ফলে শিশুর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বিকাশ ঘটার সুযোগ কমে যায়। এক্ষেত্রে শিক্ষক পাবেন তাদেরকে খেলাধুলা, গল্পবলা বা লেখা, বিতর্ক, চারু ও কারুকলা, সংগীত, শরীরচর্চা সঠিকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে। এতে শিশুর মধ্যে কল্পনাশক্তি, চিন্তা-চেতনা, শারীরিক সুস্থতা, পর্যবেক্ষণ দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতা বা উদ্ভাবনী ধারণার সৃষ্টি করবে। উদ্ভাবনী ধারণা বা সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনার বিকাশ করা শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা, সুতরাং শিশুর মানসিক বিকাশে অভিভাবক, শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায় যে, শিশুর মানসিক বিকাশ যত সমৃদ্ধ হবে তত কল্পনাশক্তি, চিন্তা-চেতনা এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তার উদ্ভাবনী ধারণা প্রয়োগ বাড়বে। এর ফলে শিশু শুধুমাত্র শিক্ষা জীবনেই নয় ব্যক্তি জীবনেও কৃতিত্ব অর্জনে বিশেষ অবদান রাখবে।
লেখক: মো. কামরুল হাসান সোহেল
সাবেক নির্বাহী অফিসার, নবাবগঞ্জ উপজেলা।
সূত্রঃ mzamin.com