রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ‘জাতীয় সরকার’ বিধানটি নতুন নয়। নিকট অতীতে সংসদীয় গণতন্ত্রের পাদপীঠ ব্রিটেনে এর উদাহরণ রয়েছে। ১৯৩১ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত র্যামজে ম্যাগডোনাল্ড, স্টেনলি বল্ডউইন এবং নেভিল চেম্বারলেন এ ধরনের সরকার পরিচালনা করেন। সাধারণত জাতীয় সঙ্কটময় সময়ে এ ধরনের সরকারের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। মূলত জাতীয় সরকার হচ্ছে সব মত ও সব পথের লোকদের নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। এর আরেকটি নাম সর্বদলীয় সরকার।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্যার উইনস্টন চার্চিল সর্বদলের সমন্বয়ে ব্রিটেনে সরকার পরিচালনা করেন। সে সরকারকেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জাতীয় সরকার নামে অভিহিত করা হয়। সর্বদলীয় সরকার ও জাতীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য সামান্য। সর্বদলীয় সরকারে সব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির উপস্থিতি থাকে। অপর দিকে জাতীয় সরকারে সিভিল সোসাইটি তথা সুশীলসমাজের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ রয়েছে। পেশাজীবী ও ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তিরও সুযোগ এখানে রয়েছে। তাই জাতীয় সরকার অভিধাটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক সঙ্কটপ্রবণ দেশ। অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়নি। সরকার পরিবর্তনের জন্য নিয়মতান্ত্রিক পথের বদলে অনিয়মতান্ত্রিক অধ্যায় রচিত হয়েছে। কখনো স্বৈরতান্ত্রিক রাজনীতি, রক্তপাত, অভ্যুত্থান ও ষড়যন্ত্রে অতিবাহিত হয়েছে সময়। যখনই বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট অনুভূত হয়েছে, তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করেছে। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক আ স ম রব ও কয়েকজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন। অপর দিকে আওয়ামী লীগ জাতিকে গঠনের পরিবর্তে নিরেট ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। দলীয় সরকার গঠন করে। ২০২১ সালের শেষের দিকে হাসিনা স্বৈরাচার থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য আ স ম রব আবারো জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন। ২০২২ সালের মে মাসে ‘জাতির সঙ্কট নিরসনে জাতীয় সরকার’ শিরোনামে একটি লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি মরহুম ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার প্রস্তাবনাটি বেশ আলোচিত-সমালোচিত হয়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি মেনে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। এভাবে নির্বাচন-পূর্ব ও নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনা পেশ করেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে এক বিবৃতিতে বলেন, এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। দাবি আদায়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা আগামী নির্বাচন করব। নির্বাচনের পরে বিএনপি একা সরকার গঠন করবে না। এই সরকারের পতনের আন্দোলনে যারা সাথে থাকবেন সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। এটি ছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে কুশলী প্রস্তাব। এই প্রস্তাবনাটি সেই সময়ে জাতীয় ঐক্য দৃঢ়করণে ভ‚মিকা রাখে। সমস্ত রাজনৈতিক দল আশ্বস্ত হয় এই ভেবে যে, তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম বৃথা যাবে না। পরবর্তী সরকারে তাদের অবদান রাখার অবকাশ রয়েছে।
এর পরের ঘটনাবলি সবারই জানা। একটি ডামি ও বোগাস নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রয়াস নেয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী স্বৈরাচারের পতন ঘটে। যিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পালায় না, তিনি অনিবার্যভাবেই পলায়ন করলেন। শিক্ষার্থীদের সূচিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবশেষে জাতির মুক্তির পথ দেখাল। এক নদী রক্ত পেরিয়ে অর্জিত হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাকে সুসংহত করার জন্য অনুভূত হলো জাতীয় ঐক্যের চেতনা। আবারো উচ্চারিত হলো জাতীয় সরকার প্রস্তাবনা। ৬ আগস্ট এক লাইভ অনুষ্ঠানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সরকারের রূপরেখা দেবেন বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জাতীয় সরকারের রূপরেখার জন্য আমরা একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করব। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রূপরেখা দেবেন। পরবর্তীকালে জাতীয় শব্দটির পরিবর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা উচ্চারিত হয়। বাস্তবে জাতীয় সরকার ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে পার্থক্য ছিল না। তবে তাত্তি¡কভাবে জাতীয় সরকার ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্থক্য রয়েছে। এখন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা দলনিরপেক্ষ জাতীয় ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে গঠিত। জাতীয় সরকার হলে তাতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ ছিল।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠিত হলে তা আরো গ্রহণযোগ্যতা পেতো। এখন সংস্কার ও মেয়াদ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে তা হয়তো থাকত না। সব দলের সমন্বয় ও বুদ্ধিজীবীদের অংশগ্রহণে সরকার গঠিত হলে তার কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেতো। এটি বাস্তব সত্য যে, জাতির সামনে যে জঞ্জাল রয়েছে তা পরিষ্কার করা সহজসাধ্য কাজ নয়। এ জন্য বেশ সময়ের প্রয়োজন। প্রতিনিধিত্বশীল নয় বলে রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার প্রস্তাবনা ও সময়কাল নিয়ে কথা বলছে। রাজনৈতিকভাবে সরকার গঠিত হলে এই সমস্যা অনুভূত হতো না। যাই হোক, এটি আশার কথা যে, সব রাজনৈতিক দল প্রফেসর ইউনূসের ওপর আস্থা প্রকাশ করেছে। সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যৌক্তিক সময় দিতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণের বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই সরকারের জনভিত্তি ও সমর্থন প্রবল। তবে রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো-বা বেশি দিন ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থাকলে অধৈর্য হয়ে পড়বে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জননিরাপত্তা, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও অনিবার্য অর্থনৈতিক বিষয়াদি সমাধানের পর নির্বাচনের দিকে নজর দেবে। ইতোমধ্যে স্বৈরাচার সৃষ্ট নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে। সরকার শিগগিরই হয়তো কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেবে। রাজনৈতিক দলগুলো এখন নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার কাজে ব্যস্ত রয়েছে। যতই নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসবে, ততই তাদের মতপার্থক্য ও ভিন্নতর অবস্থান প্রকাশিত হবে। গণবিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত অক্ষুণ্ণ জাতীয় ঐক্য ক্রমেই অগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। রাজনৈতিক দলভিত্তিক জনমত প্রকাশিত হতে থাকবে। যখন নির্বাচন শুরু হবে তখন দ্ব›দ্ব-বিবাদের এই দেশে এখনকার মতো ঐক্যের পরিবেশ স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হবে। এখনই প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৃদু বিতর্ক অনুভূত হচ্ছে। মানুষ যারা দেশকে ভালোবাসেন, জাতীয় ঐক্যের স্বপ্ন দেখেন এবং ভবিষ্যৎ স্বৈরাচার অবসানের আশা করেন তারা বিভেদের মধ্যেও ঐক্য দেখতে চান। ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি বা বৈচিত্র্যের মধ্যে যে ঐক্য অর্জিত হতে পারে তার অসংখ্য উদাহরণ ইতিহাস-ভূগোলে রয়েছে। তার জন্য দরকার পারস্পরিক সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার বন্ধন। বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত ইতিহাস সুখকর নয়। তাই শঙ্কারও কারণ আছে।
গণবিপ্লব পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী পরিবেশ পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক সমীকরণে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। গত ১৫ বছরে একটি নিকৃষ্ট বিকারগ্রস্ত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিরোধী শক্তিগুলো ছিল একাট্টা। এখন সম্পূর্ণ মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশে রাজনৈতিক শক্তিগুলো সেভাবে এক ও অভিন্ন নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই স্বৈরাচারী শক্তির অনুপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ কৌশল ও কর্মসূচি নিয়ে এগোবে- এটিই স্বাভাবিক। এই সুযোগে পতিত স্বৈরাচার বিভেদ, বিনিয়োগ, লোভ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করতে চাইবে। তাদের রয়েছে রাষ্ট্রের সর্বত্র স্থাপিত দলতন্ত্রের জনশক্তি, অঢেল অর্থ ও সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রতিবেশীর অজুহাতের অসহযোগিতা ও আক্রমণ। যা ইতোমধ্যেই অনুভূত হচ্ছে। তিনি সেখানে আছেন এবং নিত্যদিন ষড়যন্ত্রের ছক আঁকছেন। সুতরাং এসবের মোকাবেলায় দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক শক্তির অব্যাহত ঐক্য অনিবার্য।
দেশী-বিদেশী নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় নির্বাচন-পরবর্তী সরকার কতটা সক্ষম হবে তা নিয়ে দেশপ্রেমিক জনগণ শঙ্কিত। ক্ষমতার লোভ যে মীর জাফরদের কত নিকৃষ্ট করে তুলতে পারে তার উদাহরণ সেই অতীত ও ডামি নির্বাচনে জনগণ দেখেছে। কথায় বলে, ঘর পোড়া গরু আগুন দেখলেই ভয় পায়। সেই ধরনের আতঙ্ক ও আশঙ্কার মধ্যে জনগণ একটি আশার আলো দেখছে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘোষণায়।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নির্বাচন প্রাক্কালে তিনি একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিষয়টি ইতঃপূর্বে উল্লিখিত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই ঘোষণা কতটা কার্যকর থাকে, তা নিয়ে নাগরিক সাধারণে কৌতূহল ছিল। এখন প্রশ্নাতীতভাবে নতুন ঘোষণায় তার রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও পরিপক্বতা প্রমাণিত হয়েছে।
জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ভবিষ্যতে ‘জাতীয় সরকার’-এর মাধ্যমে দেশ পরিচালনা চায় বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের পূর্বসূরিরা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। এই যুদ্ধ জয়ের মূলশক্তি ছিল প্রশ্নহীন জাতীয় ঐক্য। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমরা সেই ঐক্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারিনি। অত্যাবশ্যকীয় একটি জাতীয় সরকারের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসায় দেশ বিভক্ত হয়ে পড়ে প্রথম দিন থেকেই। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও দেশ গঠন কোনো অবদান রাখতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, আমরা দেখেছি দলীয় সরকারে কিভাবে একটি দলের লোকজন বিচরণ করে সর্বত্র, আর অন্য সবার অবস্থান হয়ে পড়ে তুচ্ছ আর গৌণ। ফলে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত হয়। স্বাধীনতার পরপর জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে ব্যবহার না করে যে সুযোগ সেদিন হাতছাড়া করা হয়েছে, আগামী দিনে আমরা এর পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা দেখতে চায়। তারেক রহমান বলেন, এ দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছেন; তারা সবাই আগামীতে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন, যাতে দেশ তাদের অবদানের সুফল থেকে বঞ্চিত না হয়। তিনি বলেন, আমাদের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার পরিকল্পনার কথা দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন। দেশে প্রথাগত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন কিন্তু দেশ গঠন, উন্নয়ন ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে চান- এমন অসংখ্য জ্ঞানী, গুণী শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, মানবতাকর্মী রয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে তাদের পক্ষে সংসদে সদস্য হিসেবে অবদান রাখার সুযোগ নেই। তাদের সেবা আর অবদান দেশের কাজে লাগাতে বিএনপি পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও উচ্চকক্ষসহ দ্বিকক্ষ-বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায়। আমরা জানি- দেশের মানুষের সমর্থনই কেবল আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে।
জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধারের এই দীর্ঘ আশান্বিত বক্তব্য জাতিকে আশ্বস্ত করেছে। অনেকেরই ধারণা ছিল, যেখানে বিএনপি এখন ভবিষ্যতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের যৌক্তিক স্বপ্ন দেখতে পারে, সেখানে তাদের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকারের ঘোষণা ভবিষ্যৎ সরকারের ভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতাকে মজবুত করবে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিও রাজনৈতিক ঐকমত্যের কথা বলে আসছে। প্রধান ও অপ্রধান ডান ও বাম সবার সমন্বয়ে যদি ভবিষ্যৎ জাতীয় সরকার গঠিত হয় তাহলে প্রত্যাশিত সংস্কার প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন ও সহজ হয়ে উঠবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে হিমালয়সম সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন অসম্ভব। তাদের নির্দেশিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকারবদ্ধ সেহেতু জাতীয় সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্তগ্রহণ ও বাস্তবায়নে ঐকমত্য পরিলক্ষিত হবে। নির্বাচনে যে দল যত বেশি বা কম আসন পাবে তারা সরকারের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় তত বেশি অবদান রাখতে পারবে বলে আশ্বস্ত থাকবে। অবশেষে জেমস ফ্রিমেন ক্লার্কের একটি উক্তি দিয়ে শেষ করি, ‘A politician thinks of the next election; a statesman thinks of the next generation.’
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com
সূত্র :dailynayadiganta.com